.png)

ওয়াই-ফাই ৭ কী
Published : ১৮:০৬, ৩ আগস্ট ২০২৫
একটি ৮কে ফিল্ম স্ট্রিমিং করা, ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশ নেওয়া, আর বাড়িভর্তি স্মার্ট ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা- এ সব কিছু একসঙ্গে করা যাবে কোনও ঝামেলা ছাড়াই। এমন নিরবচ্ছিন্ন ডিজিটাল জীবন আর দূরের স্বপ্ন নয়। ওয়াই-ফাই ৭-এর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ এখন সংযোগ, যোগাযোগ এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এক বিশাল পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।
মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোর-জি থেকে ফাইভ-জিতে উন্নীত হয়েছে, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ওয়াই-ফাই প্রযুক্তিও সমানতালে এগিয়ে চলেছে। ওয়াই-ফাই ৪, ৫ থেকে শুরু করে এখন বহুল ব্যবহৃত ওয়াই-ফাই ৬- প্রতিটি ধাপেই গতি, নির্ভরযোগ্যতা আর ক্ষমতা বেড়েছে। তবে, ওয়াই-ফাই ৭- যার আনুষ্ঠানিক নাম আইইইই ৮০২.১১বিই, একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ।
ওয়াই-ফাই ৭ কী?
২০২৩ সালের শুরুতে, ওয়াই-ফাই অ্যালায়েন্স- ওয়াই-ফাই ডিভাইসের জন্য বিশ্বব্যাপী সার্টিফিকেশন সংস্থা-"ওয়াই-ফাই সার্টিফায়েড ৭" প্রোগ্রাম চালু করে, যা এই নতুন প্রযুক্তির বিশ্বব্যাপী মান নির্ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত ৬০টির বেশি দেশ এই প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ৬ গিগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্যান্ড পুরোপুরি বা আংশিকভাবে খুলে দিয়েছে।
ওয়াই-ফাই ৬ থেকে ওয়াই-ফাই ৭ কীভাবে আলাদা?
ওয়াই-ফাই ৭ ওয়্যারলেস সংযোগে এক নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে, যা অসাধারণ গতি, বাড়তি ক্ষমতা এবং অতি-দ্রুত সংযোগ দেয়। এর ডেটা ট্রান্সমিশন রেট ২৩ গিগাবিট প্রতি সেকেন্ড (জিবিপিএস) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে- যা ওয়াই-ফাই ৬-এর তুলনায় প্রায় তিন গুণ দ্রুত। এর একটি বড় প্রযুক্তিগত উন্নতি হলো ৪০৯৬-কিউএএম (কোয়াড্রেচার অ্যামপ্লিটিউড মডুলেশন), যা আগের তুলনায় ডেটার গতি ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হলো মাল্টি-লিংক অপারেশন (এমএলও), যা ডিভাইসগুলোকে একই সঙ্গে ২.৪ গিগাহার্টজ, ৫ গিগাহার্টজ এবং ৬ গিগাহার্টজ- এই তিনটি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার করতে দেয়।
এছাড়া, ওয়াই-ফাই ৭-এ ৩২০ মেগাহার্টজ চ্যানেল ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হয়, যা ওয়াই-ফাই ৬-এর দ্বিগুণ। এটি ডেটা ট্রান্সফারকে আরও দ্রুত করে, যা ৮কে ভিডিও স্ট্রিমিং, এআর/ভিআর প্ল্যাটফর্ম এবং রিয়েল-টাইম গেমিংয়ের মতো উচ্চ-চাহিদার অ্যাপ্লিকেশনের জন্য আদর্শ। আরও বেশি ডিভাইসকে দ্রুত গতিতে এবং কম লেটেন্সির সঙ্গে সংযুক্ত করার ক্ষমতার কারণে, ওয়াই-ফাই ৭ ভোক্তা এবং শিল্প উভয়ের জন্যই একটি মৌলিক প্রযুক্তি হতে চলেছে।
ওয়াই-ফাই ৭-এর ব্যবহার:
ওয়াই-ফাই ৭-এর বাস্তব প্রয়োগ ব্যাপক এবং প্রভাবশালী।
•শিক্ষায়: রিয়েল-টাইম, ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিজিটাল ক্লাসরুম সম্ভব করে।
•স্বাস্থ্যসেবায়: ল্যাগ-ফ্রি টেলিমেডিসিন, দূরবর্তী ডায়াগনস্টিক এবং রিয়েল-টাইম রোগী মনিটরিংয়ের সুবিধা দেয়।
•উৎপাদন ও লজিস্টিকসে: শিল্প ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) সিস্টেমের নির্ভুলতা ও নিরবচ্ছিন্ন কার্যকারিতা বাড়ায়।
•অর্থনীতিতে: উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং এবং ডেটা অ্যানালিটিক্সে ন্যূনতম লেটেন্সি দেয়।
•দৈনন্দিন জীবনে: দ্রুত ভিডিও কল, ইমার্সিভ ভিআর অভিজ্ঞতা এবং আরও স্মার্ট ও দ্রুতগতির বাড়ি ও শহর তৈরি করে।
বাংলাদেশে ওয়াই-ফাই ৭
বাংলাদেশে ওয়াই-ফাই ইতিমধ্যেই সংযোগের প্রধান মাধ্যম এবং আগামী বছরগুলোতে এর ব্যবহার আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, ওয়াই-ফাই ৭-এর পুরো সুবিধা পেতে হলে রাউটার বা একসেস পয়েন্ট এবং সংযুক্ত ডিভাইস (ফোন, ল্যাপটপ, আইওটি ডিভাইস) উভয়কেই এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। কিছু ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন ইতিমধ্যে ওয়াই-ফাই ৭ সমর্থন করে, তবে অনেক বাড়ি ও অফিসে রাউটার আপগ্রেড করতে হবে। বাংলাদেশে হুয়াওয়ে প্রথম কোম্পানি হিসেবে ছয়টি ওয়াই-ফাই ৭ একসেস পয়েন্ট (এপি) মডেল চালু করেছে, যা দেশের ওয়্যারলেস আধুনিকীকরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এমএএইচ