শনিবার; ০২ আগস্ট ২০২৫; ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ফাইবার ব্যাংক কী ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

ফাইবার ব্যাংক কী

-ইনফোটেক ইনসাইট ডেস্ক

Published : ১৭:৪৯, ১০ জুলাই ২০২৫

দেশে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের অব্যবহৃত সম্পদ কাজে লাগাতে একটি ফাইবার ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি হবে একটি সফট কনসোর্টিয়াম, যেখানে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ফাইবার নেটওয়ার্ক একত্রিত করে প্রয়োজন ও স্থান অনুযায়ী প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে এবং দূরত্বের ভিত্তিতে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। এতে থাকবে রাজস্ব ভাগাভাগির একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা।

টেলিকম খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ফাইবার ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে ও বিভিন্ন ফোরামে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম ফাইবার ব্যাংক গঠনের তাগিদ দিয়েছেন।

ফাইবার ব্যাংকের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে চার সরকারি সংস্থার অধীনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে, যার বেশিরভাগই অব্যবহৃত।

বাংলাদেশ রেলওয়ে: রেল ট্র্যাকের বাইরে ফাইবার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার কারণে এর ফাইবার নেটওয়ার্ক অব্যবহৃত রয়েছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি): সঞ্চালন লাইনের বাইরে ফাইবার ব্যবহারের সীমাবদ্ধতার কারণে এর বেশিরভাগ ফাইবার অব্যবহৃত।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি): ৪৮ কোর ফাইবারের মধ্যে মাত্র ২ কোর ব্যবহৃত হচ্ছে, বাকি ৪৬ কোর অব্যবহৃত।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল): প্রায় ১২ কোর ন্যাশনওয়াইড ফাইবার অব্যবহৃত রয়েছে।

ফাইবার নেটওয়ার্ক ১২-১৫ বছরের মধ্যে সক্রিয় না হলে তা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এই সম্পদ অব্যবহৃত থাকলে আগামী ১০ বছরে দেশের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।

ফাইবার ব্যাংকের কার্যপ্রণালী

ফাইবার ব্যাংকের মাধ্যমে অব্যবহৃত ফাইবার নেটওয়ার্ককে একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় এনে কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী কম্পিউটার-সফটওয়্যার বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিকটতম ফাইবার শনাক্ত করে সংযোগ দেওয়া হবে।

বিটিসিএল, পিজিসিবি, বিসিসি এবং রেলওয়ের ফাইবার এই কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে ব্যবহৃত হবে।

ফাইবার ভাড়ার মাধ্যমে বিসিসি, বিটিআরসি এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থাগুলো রাজস্ব পাবে।

দেশে প্রায় ৭৮ হাজার ৪০০ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক রয়েছে, যার ৪০ শতাংশ অব্যবহৃত।

বিটিসিএল: ৩৯ হাজার ৫০০ কিলোমিটার, যার ৯০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ।

বিসিসি: ২৭ হাজার ৬৯৫ কিলোমিটার, ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে পৌঁছেছে; আরও ৭ হাজার কিলোমিটার সম্প্রসারণাধীন।

পিজিসিবি: ৮ হাজার কিলোমিটার, অধিকাংশ অব্যবহৃত।

বাংলাদেশ রেলওয়ে: ৩ হাহার ২০৫ কিলোমিটার, বেশিরভাগ অব্যবহৃত।

এই অব্যবহৃত ফাইবারকে কাজে লাগালে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব। বর্তমানে ৮০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার এবং ৯৮ শতাংশ ঘরবাড়ি ফাইবার সংযোগের আওতার বাইরে। ফাইবার ব্যাংকের মাধ্যমে এই সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

অব্যবহৃত ফাইবার লিজের মাধ্যমে বছরে ৫০০ কোটি টাকার বেশি আয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিটিসিএলের নেতৃত্বে যৌথ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমবে। বেসরকারি এনটিটিএন অপারেটরদের ব্যান্ডউইথ খরচ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে।

সব মোবাইল টাওয়ার ফাইবার সংযোগে আসবে, ফলে কম খরচে দ্রুত ৫-জি রোলআউট সম্ভব হবে।

ইউনিয়ন পর্যায়ে ১ জিবিপিএস বা তার বেশি গতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন সম্ভব।

জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে এই ফাইবার ব্যাংকে যুক্ত হওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিটিসিএল ও বিসিসি এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে।

এমএএইচ

শেয়ার করুনঃ