.png)

ঝুঁকিতে কর্মসংস্থান বাজার, সতর্ক করলেন ডিপমাইন্ডের সিইও
Published : ২২:৩২, ১১ জুন ২০২৫
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব সৃষ্টি করলেও কিন্তু এর সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকিগুলো নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। সম্প্রতি গুগল ডিপমাইন্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেমিস হাসাবিস এক সাক্ষাৎকারে এআই-এর প্রভাব, বিশেষ করে কর্মসংস্থান বাজারের ওপর এর সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তার মতে, এআই-এর দ্রুত প্রসার শুধু সুযোগই নয়, বরং চাকরির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে।
কর্মসংস্থানে এআই-এর প্রভাব
এআই-চালিত অটোমেশন ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিল্পে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। উৎপাদন, গ্রাহক সেবা, পরিবহন এবং ডেটা প্রক্রিয়াকরণের মতো ক্ষেত্রে এআই-এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। হাসাবিস উল্লেখ করেছেন, এআই কিছু ক্ষেত্রে মানুষের তুলনায় দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে, যার ফলে ঐতিহ্যবাহী পেশাগুলো হুমকির মুখে পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন এবং চ্যাটবটের মতো প্রযুক্তি ড্রাইভার এবং গ্রাহক সেবা প্রতিনিধিদের কাজকে প্রতিস্থাপন করছে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগামী এক দশকে এআই-এর কারণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ চাকরি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে পুনরাবৃত্তিমূলক এবং নিয়মিত কাজের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এই পরিবর্তন শ্রমবাজারে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে, যেখানে শ্রমিকদের নতুন দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।
নতুন সম্ভাবনার দ্বার
তবে এআই শুধু চাকরি হ্রাসই করছে না, বরং নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করছে। ডাটা সায়েন্স, এআই অ্যালগরিদম ডেভেলপমেন্ট, সাইবার নিরাপত্তা এবং এআই নীতি গবেষণার মতো ক্ষেত্রে দক্ষ পেশাজীবীদের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। হাসাবিস জোর দিয়েছেন যে, এআই-এর এই নতুন যুগে শ্রমিকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রোগ্রামিং, মেশিন লার্নিং এবং ডাটা বিশ্লেষণের মতো দক্ষতা ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এছাড়া, এআই সৃজনশীল ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। শিল্প, সঙ্গীত, এবং লেখালেখির মতো ক্ষেত্রে এআই-এর সহায়তায় নতুন ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তবে, এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হলে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।
এআই-এর ঝুঁকি ও নৈতিক প্রশ্ন
কর্মসংস্থানের ওপর এআই-এর প্রভাবের পাশাপাশি এর নৈতিক ও সামাজিক ঝুঁকিও উপেক্ষণীয় নয়। হাসাবিস সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এআই-এর অপব্যবহার, যেমন পক্ষপাতমূলক অ্যালগরিদম বা ভুল তথ্য ছড়ানো, সমাজে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি এআই সিস্টেম পক্ষপাতমূলক ডাটার ওপর নির্ভর করে, তবে এটি বৈষম্য বাড়াতে পারে। এছাড়া, এআই-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণ ও নীতিমালার প্রয়োজন। এআই-এর দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার, গবেষক এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। হাসাবিসের মতে, এআই-এর উন্নয়নে জনগণের মতামত ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমাধানের পথ
এআই-এর ঝুঁকি মোকাবিলা এবং এর সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত দক্ষতার ওপর জোর দিতে হবে। স্কুল-কলেজে কোডিং, ডেটা বিশ্লেষণ এবং এআই-সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশিক্ষণ চালু করা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের জন্য পুনঃপ্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং আজীবন শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে। তৃতীয়ত, এআই-এর নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্বচ্ছ নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে।
পরিশেষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের সামনে অপার সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে, তবে এর সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকিগুলোকে অবহেলা করলে চলবে না। ডেমিস হাসাবিসের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, এআই-এর যুগে প্রস্তুতি এবং দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্মসংস্থান বাজারে এআই-এর প্রভাব মোকাবিলায় শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং নৈতিক নীতিমালার সমন্বয় জরুরি। আমরা যদি এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি, তবে এআই আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
সূত্র: সিএনএন ডট কম
এমএএইচ