.png)

ই-স্পোর্টস জাতীয়ভাবে আয়োজনের স্বপ্ন দেখেন আনাস খান
Published : ১৮:২৮, ২৯ জুলাই ২০২৫
সম্প্রতি ই-স্পোর্টসকে সরকার ক্রীড়া হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে ই-স্পোর্টস নিয়ে কাজ করছেন প্রযুক্তি পণ্যের ব্র্যান্ড গিগাবাইটের কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ) খাজা মো. আনাস খান। গিগাবাইট ই-স্পোর্টসের পণ্যগুলো তৈরি ও বিশ্বব্যাপী বিপণন করে। দীর্ঘদিনের জার্নির সফল রূপায়ন নিয়ে ইনফোটেক ইনসাইটের সাথে কথা বলেছেন খাজা মো. আনাস খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হিটলার এ. হালিম
ই-স্পোর্টস তো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রীড়া হিসেবে স্বীকৃতি পেলো সরকারের কাছ থেকে। এই যে আপনার দীর্ঘদিনের একটা জার্নি, সফল জার্নি বলা যায়, এক জায়গায় এসে সফলতা পেলো। এরপরে আপনি এটাকে কিভাবে নিয়ে এগোতে চান?
খাজা মো. আনাস খান: আমি প্রথমে শুকরিয়া আদায় করি। অনেকদিন পরে স্পোর্টস গেমারদের জন্য একটা আস্থার জায়গা আসছে বলে আমরা মনে করি। গেমারদের একটা বড় চাওয়া ছিল এটা। গত ২০ বছর যাবত আমি ই-স্পোর্টসের সাথে কাজ করছি, যতটুকু পারি আমার সাধ্য অনুযায়ী, আমার ব্র্যান্ড অনুযায়ী। ২০০৪-০৫ থেকে আমরা ডাব্লিউসিজি (ওয়ার্ল্ড সাইবার গেমস) নিয়ে কাজ করছি। এই সুবাদে আমরা ২০ বছর ধরে কাজ করছি। আমার কাছে দেখার যে ব্যাপারটা, এটা তো অবশ্যই পজিটিভ একটা দিক। আমরা সবারই যে আশাটা ছিল এটা যাতে বাস্তবায়ন হতে পারে, ভালো কাজে রূপ নিতে পারে, এজন্য আমাদের সবারই এটা নিয়ে কাজ করা উচিত বলে মনে করি। আর প্রত্যেকটা জিনিসে কিন্তু নেগেটিভ এবং পজিটিভ- দুটো দিকই আছে। আমরা পজিটিভ দিকটা নিয়ে আলোচনা করলেই পজিটিভ অনেক দিকই বেরিয়ে আসবে।
এই স্বীকৃতি পেতে আপনাদের কতদিন লাগলো?
খাজা মো. আনাস খান: সরকারি স্বীকৃতি পেতে তো অনেকদিনই লাগলো। এটার পিছনে গেমার, অনেক কমিউনিটি, আমি বা আমাদের অনেকেরই অবদান আছে। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও এই কাজটা অনেকদিন ধরেই করছিলো এবং সবার ভিতরেই একটা চাওয়া ছিল। সবাই চাচ্ছিল যেন বাংলাদেশে স্পোর্টসের স্বীকৃতি দেওয়া হয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে। তাহলে এটা নিয়ে অনেক ভালো কিছু করা যাবে। পরে সেটাই হয়েছে। ফলে সবার এই আশাটা পূরণ হয়েছে। এখন বাস্তবায়ন হলেই আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়।
এটা নিয়ে আগামীতে আপনার পরিকল্পনাটা জানতে চাই।
খাজা মো. আনাস খান: আমি কাজটা গিগাবাইট ব্র্যান্ডকে সাথে নিয়ে করেছি। আমাদের পরিকল্পনা হলো আমরা তো গিগাবাইটে ছিলাম, আছি, থাকবো আশা করি। গিগাবাইট যে বাংলাদেশে মার্কেটে আজকে এত একটা ভালো অবস্থানে এসেছে এর পেছনে গেমারদের অনেক বড় একটা অবদান রয়েছে। আর গেমার, স্টুডেন্ট, ইউজাররা- সবাই জানেন আমরা ইউজারদের সাথে সবসময় চলাফেরা করি, কাজ করে থাকি, তাদের ডাকে আমরা সাড়া দেই, আমাদের ডাকেও তারা সাড়া দেয়। আমরা চাচ্ছি এই কমিউনিটিটাকে আরও শক্তিশালী করা যায়, কিভাবে তাদের সবার সমন্বয় করিয়ে আরও সুন্দরভাবে একটা ভালো কিছু দেওয়া যায়। আমাদের একটা ইচ্ছা আছে, একটা বড় ইভেন্ট কিভাবে সামনে আয়োজন করা যায়। যেহেতু এটার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে। আশা করি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আমাদের ডাকে সাড়া দেবে। তাদের বিভিন্ন কাজে বা যেকোনও প্রয়োজনে যদি তারা আমাকে বা আমার দলকে ডাকে অবশ্যই গেমাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করবে। আমি নিজেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করার করবো। অলরেডি বিসিএস (বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি) ই-স্পোর্টস নিয়ে কাজ শুরু করছে।
আপনি বিভিন্ন সময় এবং দেশীয় কমিউনিটিরা গেমিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। এখন কি সরকারিভাবে এসব আয়োজন হবে?
খাজা মো. আনাস খান: অবশ্যই। কারণ হলো যেহেতু এটা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে চলে গেছে। তারা এটা নিয়ে কাজ করবে। স্বীকৃতি তো দিয়েছে, এখন ঘরে বসে থাকলে তো হবে না। এখন যেমন আমরা ফুটবল দেখি, ক্রিকেট দেখি, হকি দেখি, ব্যাডমিন্টন দেখি, বিভিন্ন ধরনের গেমস আছে, এগুলোর পাশাপাশি ই-স্পোর্টসটাকে সবাই একইভাবে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর নিতে হলে কি করতে হবে? বিভাগীয় পর্যযায়ে লিগ আয়োজন করতে হবে। এটাকে নিয়ে পরামর্শ করতে হবে। পাবলিক ইউনিভার্সিটি, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি- সব জায়গায় সর্বস্তরে ই-স্পোর্টস নিয়ে কাজ করতে হবে।
আপনি কি ভাবছেন- সরকার একটা জাতীয় পর্যায়ে আয়োজন করবে? স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত হবে?
খাজা মো. আনাস খান: হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা এসব নিয়ে আশাবাদী। ই-স্পোর্টসটা কিন্তু এখন ছোট গণ্ডির ভেতরে নেই। ই-স্পোর্টস যে শুধু কম্পিউটার দিয়েই গেম খেলতে হবে তা না, এখন কিন্তু মোবাইলেও খেলা হচ্ছে। মোবাইল গেমগুলা খুবই বিখ্যাত। মোবাইল এবং হার্ডওয়্যার- টোটাল টেকটাকে যদি বলা হয়, টোটাল টেকটা কিন্তু ই-স্পোর্টসের সাথে জড়িত। এর সাথে নেটওয়ার্কিং প্রোডাক্টও কিন্তু জড়িত। আইএসপিরাও (ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) প্রয়োজন আছে। সুতরাং ই-স্পোর্টসকে বাস্তবায়ন করতে গেলে টোটাল টেকটাকে নিয়ে কাজ করতে হবে।
সরকারের তো ই-স্পোর্টস নিয়ে কোনও অভিজ্ঞতা নেই। সরকার যদি এ ধরনের কোনও কিছু আয়োজন করতে গিয়ে যদি আপনাদের ডাকে। যৌথভাবে কাজের অফার দেয়, সেক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকাটা কী হবে?
খাজা মো. আনাস খান: অবশ্যই আমরা সাথে থাকবো। কারণ আমরা তো এটাই চাচ্ছি, আমাদেরকে ডাকুক বা আমরা তাদের সাথে থাকি। তাদের সাথে থাকাটা কিন্তু আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। আমি নিজে ২০ বছর যাবত এটা নিয়ে কাজ করছি। আমি এই ডাকের অপেক্ষায় কিন্তু আছি।
সরকারের কাজের ধরন তো একটু আলাদা। সময় সাপেক্ষ। অনেকগুলা ধাপ থাকে। সেইসব ধাপ পার হয়ে এটার আয়োজন করা শুরুর দিকে কঠিন হতে পারে। সিদ্ধান্ত নিতেও একটা বড় সময় লেগে যেতে পারে। সেটা যদি হয় তাহলে আপনারা এটাকে নিয়ে কিভাবে এগোবেন?
খাজা মো. আনাস খান: এটা করার জন্য টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে। স্পন্সর লাগবে। অলরেডি বাংলাদেশে ই-স্পোর্টস নিয়ে অনেক কিছু চালু হচ্ছে। একাধিক মোবাইল কোম্পানি কাজ করছে, বিভিন্ন টেক কোম্পানি কাজ করছে। আমরা যদি মনে করি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছু বোঝে না তাহলে ভুল হবে। তারা অবশ্যই বোঝে। বোঝে বলেই তারা এটাকে স্বীকৃতি দিছে এবং তাদের কাছে এ ধরনের সবকিছু আছে, টোটাল সলিউশন আছে বলেই তারা এগিয়েছে। এরপরেও যদি তারা মনে করে আমাদেরকে প্রয়োজন, ডাকলে আমি অবশ্যই যাব।
আমাদের দেশে ই-স্পোর্টসকে কী পেশা হিসেবে নেওয়ার কোনও সুযোগ আছে?
খাজা মো. আনাস খান: অবশ্যই পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ আছে। ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য গেমে পেশা গড়া যায় তাহলে ই-স্পোর্টসে কেন থাকবে না? ই-স্পোর্টস এখন বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি। আমরা কেন এটাকে পেছনে রাখব? খেলোয়াড়দের তো চাহিদা আছে। আমাদের ছেলেরা দেশের বাইরে খেলতে যাচ্ছে। আমাদেরকে তো তাদের তৈরি করতে হবে। তাদেরকে লাইম লাইটে আনতে হবে। তাহলেই তো আমরা বুঝতে পারবো এর পজিটিভ দিক এবং তাদের বেশি একটু সময় দিতে হবে পজিটিভ হয়ে। আমরা চাচ্ছি এটাকে আরও সুন্দরভাবে সিস্টেমেটিকভাবে গুছিয়ে নিয়ে কাজ করতে। সবার সমন্বয়ে কিভাবে আমরা এই কাজটা আসলে করতে পারি এটা অনেক বড় বলে আমরা মনে করি। আর আমরা সবার সমন্বয়ে একসাথে কাজ করি, এটা কোনও সমস্যা বলে হবে বলে মনে হয় না।
ই-স্পোর্টসে বাংলাদেশে খেলোয়াড়ের সংখ্যা কেমন?
খাজা মো. আনাস খান: যদি টোটাল ই-স্পোর্টসকে ধরেন তাহলে বলবো লাখের অধিক। বাংলাদেশে কিন্তু অনেকে তো রেজিস্টার্ড না। এখানে মোবাইল গেমও আছে ই-স্পোর্টসের আওতাধীন। মোবাইল গেমারের সংখ্যা ধরলে তো আরও বেশি হওয়ার কথা। মিলিয়ন হতে পারে।
একটা কথা প্রচলতি আছে যে, কম্পিউটার বা মোবাইলে বেশি বেশি গেম খেললে পড়াশোনার ক্ষতি হয়, চোখের ক্ষতি হয়, স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। এটা কি আসলেই পড়াশোনার কোনও ক্ষতি করে?
খাজা মো. আনাস খান: এটা তো আমি আগেই বলছি, এর ভালো ও খারাপ দুটো দিক আছে। আমরা যে আগে রাতে খেলা দেখার জন্য বসে থাকতাম। সেহরি খেয়ে খেলা দেখার জন্য বসে থাকতাম। আমরা এখন রাতে ইউরো কাপ বা বিভিন্ন লিগের ফুটবল, ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য বসে থাকি। সারাদিন বসে বসে খেলা দেখি। এতে কি আমাদের ক্ষতি হয় না? বিষয়টাকে এভাবে দেখতে হবে।
মোবাইলের যে ব্যাপারটা আছে মোবাইল কোম্পানিগুলা আইটি কোম্পানিগুলাকে তারা আস্তে আস্তে এই জিনিসটা কিভাবে হেল্পফুল হতে পারে বা কিভাবে হেলথ বেজ হতে পারে তা নিয়ে কাজ করছে। চোখের ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য আই প্রটেকশন নিয়ে কাজ হচ্ছে। গিগাবাইট ছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ড এসব নিয়ে কাজ করছে। আপনি দেখবেন মোবাইলে আপনি কতক্ষণ কাজ করছেন আর কতক্ষণ চালাচ্ছেন, ইউটিউব দেখছেন। ফেসবুকে যে সময় দিচ্ছি তাতে করে তো আমাদের চোখের ক্ষতি হচ্ছে। দোষ কেবল মোবাইল গেমের।
এটা তো আমাদের একটা আগে থেকে একটা ধারণা। এটাই কিন্তু আমি অভিভাবকদের এটাই বলতে চাইছি যে আমিও তো একজন বাবা। আমার ছেলে আছে। আমি যদি ফেসবুকে ঘন্টার পর ঘণ্টা কাটাতে পারি, অপরদিকে আমার ছেলে মোবাইলে যদি গেম খেলে ই-স্পোর্টসে ভালো হতে পারে তাহলে তার হাতে কেন মোবাইল দেব না? তবে অবশ্যই পড়াশোনা বাদ দিয়ে নয়। এটাকে একটা একাডেমিক রূপ দিতে হবে। ক্লাব তৈরি করতে হবে। ফুটবল, ক্রিকেটে যেমন আছে।
আমরা দেখেছি ই-স্পোর্টসের সাথে যারা জড়িত তারা ভালো ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে, ভালো ভালো স্কুলে বা কলেজে পড়াশোনা করছে। আমাদের গেমাররা দেশ বিদেশে ভালো ভালো জায়গায় চাকরি করছে। তারা কিভাবে করছে? মেধা ছাড়া, পড়াশোনা ছাড়া, সার্টিফিকেট ছাড়া চাকরি করতে পারবে না।
ই-স্পোর্টস ও গিগাবাইটের কিছু পণ্য ই-স্পোর্টসের সাথে সম্পর্কিত। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্র্যান্ডটি ই-স্পোর্টসকে প্রমোটও করে যাচ্ছে।
খাজা মো. আনাস খান: আমরা তো আগেই বলছি যে, গিগাবাইটের এতদূর আসার পিছনে ই-স্পোর্টস এবং ইয়াং জেনারেশনের ভূমিকা সবচাইতে বেশি। তারা ভালোবাসে বলেই গিগাবাইট আজ এখানে। আমাদের মাদারবোর্ড, গ্রাফিক্স কার্ড, ল্যাপটপ, মনিটর- এই জিনিসগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পাওয়ার সাপ্লাই, কেসিংও আছে। ক্রিয়েটিভ দিক দিয়ে যদি বলেন, কোয়ালিটি গেমিং মনিটর। গিগাবাইট কিন্তু গেমিং মনিটর থেকে শুরু করেছে। আমাদের ল্যাপটপগুলা কিন্তু এআই বেজড ল্যাপটপ।
আমাদের দেশে ই-স্পোর্টসের মার্কেট কেমন? সাইজ কেমন?
খাজা মো. আনাস খান: আমাদের মার্কেট কিন্তু ছোটও না আবার বেশি একটা বড় বলেও আমি মনে করি না। কিন্তু আমরা যেহেতু এখন একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপের দিকে যাচ্ছি, সরকার এটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যখন এটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেবে, তখন আমরা বলতে পারবো এটার সংখ্যাটা কতটুকু।
এমএএইচ