মঙ্গলবার; ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫; ১ পৌষ ১৪৩২

ওয়ার্নার ব্রাদার্সকে কিনে নিচ্ছে নেটফ্লিক্স ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

ওয়ার্নার ব্রাদার্সকে কিনে নিচ্ছে নেটফ্লিক্স

-ইনফোটেক ইনসাইট ডেস্ক

Published : ১৬:৩৮, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রাদার্সকে অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স। সম্ভাব্য এই চুক্তি ঘিরে হলিউডের শিল্পী, কলাকুশলী ও প্রযোজনা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাদের দাবি, এ ধরনের একীভূতকরণ কনটেন্টের বৈচিত্র্য কমিয়ে আনবে এবং কর্মসংস্থানে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

শিল্পসংশ্লিষ্টদের ভাষায়, এ ঘটনা এক ধরনের অভ্যুত্থান। অনেকের আশঙ্কা, বিপুলসংখ্যক কর্মী চাকরি হারাতে পারেন, আর সৃজনশীল পেশাজীবীদের আয়ের পথ সংকুচিত হবে।

স্টার্টআপ হিসেবে শুরু করা নেটফ্লিক্সকে একসময় খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন তারা এমন অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী স্টুডিওকে ৭২ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেওয়ার সামর্থ্য তাদের হয়েছে।

উদ্বেগ অ্যান্টিট্রাস্ট আইন নিয়ে

রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ) শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম তার অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বীকে কিনে নিচ্ছে-এটা অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাঁদের আশঙ্কা, কনটেন্টের পরিমাণ ও বৈচিত্র্য কমে যাবে, আর শিল্পী ও কলাকুশলীদের জীবনমান আরও অবনতি ঘটবে।

ওয়ার্নার ব্রাদার্স বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, প্যারামাউন্ট বা কমকাস্টের মতো প্রতিষ্ঠান এ স্টুডিও কিনে নেবে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে নেটফ্লিক্স সবচেয়ে বড় দরদাতা হিসেবে এগিয়ে আসে।

শিল্পে প্রজন্মগত পরিবর্তন চলছে - সিইও জাসলাভ

ওয়ার্নার ব্রাদার্সের প্রধান নির্বাহী ডেভিড জাসলাভ সম্ভাব্য অধিগ্রহণ নিয়ে উদ্বেগ না দেখিয়ে বরং বাস্তবতা মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার ভাষায়, গত কয়েক বছরে বিনোদনশিল্পে বড় ধরনের প্রজন্মগত পরিবর্তন ঘটেছে এবং এই রূপান্তর এখনো চলছে।

এদিকে, হলিউডের ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি নতুন নয়। ২০১০এর দশকে স্টুডিও ও চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমতে থাকে। কোভিড মহামারিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়- প্রযোজনা বন্ধ থাকে, স্টুডিওগুলো প্রকল্প বাতিল করে, আর প্রেক্ষাগৃহগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। দর্শক এখনো প্রাক্মহামারি সময়ের পর্যায়ে ফিরে আসেনি। খরচ কমাতে এবং করসুবিধার জন্য অনেক প্রযোজনা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে চলে গেছে।

নেটফ্লিক্সের দাবি

নেটফ্লিক্স জানিয়েছে, তারা বড় পর্দাকে এড়িয়ে যাচ্ছে- এ অভিযোগ সঠিক নয়। চলতি বছর প্ল্যাটফর্মটি ৩০টি চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিয়েছে। তবে কেবলমাত্র দীর্ঘ সময় সিনেমাহলে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ধারণার সঙ্গে তারা একমত নয়; তাদের মতে এটি গ্রাহকবান্ধব নয়।

অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে ব্যাটম্যান, হ্যারি পটার, ক্যাসাব্লাঙ্কা, দ্য উইজার্ড অব ওজের মতো জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজির নিয়ন্ত্রণ নেটফ্লিক্সের হাতে যাবে। পাশাপাশি গেম অব থ্রোনসের মতো সাড়াজাগানো সিরিজের অধিকারও তাদের কবজায় আসবে। এতে ডিজনির পর নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী এইচবিও ম্যাক্স কার্যত অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

ভোক্তার স্বার্থে কি লাভ হবে?

বিশ্লেষকদের মতে, এ চুক্তি ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক হবে- এমন নিশ্চয়তা নেই। নেটফ্লিক্স ইতোমধ্যে সাবস্ক্রিপশন মূল্য বাড়িয়েছে, বাড়িয়েছে বিজ্ঞাপনভিত্তিক মডেল, সীমিত করেছে পাসওয়ার্ড শেয়ারিং। ওয়ার্নারের মতো বৃহৎ স্টুডিও তাদের হাতে এলে মূল্য আরও বাড়তে পারে, আর বিকল্প কমে যাবে। পাশাপাশি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র শিল্প আরও সংকুচিত হবে, কর্মী ছাঁটাই ও বিনিয়োগ কমার আশঙ্কা রয়েছে।

এমএএইচ

শেয়ার করুনঃ