.png)

চালডাল উন্নত গ্রাহক সেবা দিতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে
Published : ১৩:০২, ১৩ মে ২০২৫
চালডাল ডট কম প্রধানত একটি গ্রোসারি ই-কমার্স। দৈনন্দিন গ্রোসারি (মুদি) এবং প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রুত গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে এই প্ল্যাটফর্মটি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে, দ্রুত সম্প্রসারণের পাশাপাশি আর্থিক ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করেছে তারা। এখন কেমন আছে চালডাল, কি করছে, নতুন কী আসছে সামনে এসব নিয়ে বলেছেন চালডাল ডট কমের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) জিয়া আশরাফ।
চালডাল এখন যেমন
বর্তমানে প্রতিদিন ৭ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার অর্ডার প্রক্রিয়া করে, যা বাজারে চালডাল ডট কমের শক্তিশালী অবস্থানের প্রমাণ। এই বিশাল অর্ডার সংখ্যা গ্রাহকের আস্থা ও চালডাল ডট কমের দক্ষ ডেলিভারি ব্যবস্থার ফল। চালডালের পণ্য বিভাগে পেরিশেবল, ফ্রোজেন, ড্রাই গুডস (যেমন- সাবান, শ্যাম্পু) এবং সবজি উল্লেখযোগ্য। এই বৈচিত্র্য গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে। বিশেষ করে, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা চালডাল ডট কমের ব্যবসায়িক মডেলকে শক্তিশালী করেছে।
প্রযুক্তির ব্যবহার, গ্রাহকের স্বস্তি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার শুরু করেছে চালডাল। এআই ব্যবহার করে চালডাল গ্রাহক সেবার মান উন্নত করছে। এআই-এর মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে ফোন কল করা এবং এসএমএস পাঠানোর সময় নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে যখন তখন মেসেজ এবং ফোন কলের বিড়ম্বনা থেকে গ্রাহককে কিভাবে স্বস্তি দেওয়া যায় সেসব নিয়ে কাজ চলছে। যখন তখন যেন মেসেজ না যায় সেদিকটাও দেখা হচ্ছে। এছাড়া, ডেলিভারি সময় কমিয়ে আনার জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের দিকে আমরা বেশি নজর দিচ্ছি।
চালডালের সক্ষমতা
গত ১২ বছরের যাত্রায় চালডাল একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ করছে। সম্প্রতি ৬ মিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ডিং রাউন্ড ক্লোজ করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। চালডাল মূলত কোম্পানি সেল (শেয়ার বিক্রি) করে পরিচালন মূলধন তৈরি করছে। তারা তাদের নিজেদের শেয়ার বিক্রি করেই মূলধন বাড়াচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম দিকে ফান্ড পাওয়া বেশ কঠিন ছিল। ধীরে ধীরে এবং ধাপে ধাপে প্রমাণ করতে হয়েছে যে এখানে বিনিয়োগ করা নিরাপদ।
ব্যাংক ঋণে ইতিবাচক পরিবর্তন
গত সাত-আট মাসে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্সে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর কাঠামোগত বেশ সমস্যা ছিল। তারা এই সেক্টরকে নিরাপদ মনে করতে পারছিল না। এমনকি কোথায় বিনিয়োগ করলে ভালো হয় এই ধারণাগুলোও ব্যাংকগুলোর কাছে পরিষ্কার ছিল না। এরপর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সাফল্য, যেমন চালডালে মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ইত্যাদি এসব দেখে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। এখন নিজেদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নত করার চেষ্টা করে ব্যাংকগুলো এই খাতে সম্ভাবনা খুঁজছে যা চালডালের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে।
শহরে আরও বড় হচ্ছে চালডাল
চালডালের রয়েছে ৬ হাজার পণ্যের একটি বিশাল পণ্যসারি। এতোগুলো গ্রোসারি সম্পর্কিত পণ্য ব্যবস্থাপনার অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। এজন্য অনেক বড় আকারের একটা ইনভেন্টরি সামলাতে হয়। এজন্য নির্দিষ্ট কয়েকটা এলাকা ছাড়িয়ে দেশব্যাপী এটাকে সম্প্রসারণ করতে হলে যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার তা বর্তমান দেশীয় বিনিয়োগ কাঠামোয় এটা সম্ভব নয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিরাপত্তার কারণেও সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে না। যেমন প্রত্যন্ত এলাকায় বিনিয়োগ করে যা আসবে সেই একই বিনিয়োগ করে শহর থেকে তার চেয়ে অনেক বেশি আসবে। ফলে আমরা শহরে বেশি বিনিয়োগ করবো এটাই স্বাভাবিক।
সময়মতো গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ
নির্দিষ্ট সময় বা সময়মতো যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখনও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা নিরসণের চেষ্টা চলছে। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য যে ধরনের মানসম্পন্ন প্রকৌশলী দরকার তারও অভাব আছে দেশে। তবে এর মধ্যেও বিভিন্ন প্রকৌশলীর সমন্বয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা।
ডিজিটাল লিটারেসি
চালডাল মনে করে, ডিজিটাল লিটারেসির ঘাটতি এখন আর বড় সমস্যা নয়। তবে, সবার কাছে ইন্টারনেট সুবিধা ঠিকভাবে না থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়। দেখা গেছে গ্রাহকরা কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় ফিরে রাতে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সাধারণত পণ্য ক্রয়ের অর্ডার দেন। ফলে আমরা দেখেছি, দিনের অন্যান্য সময়ে তুলনায় রাতের দিকে আমাদের অর্ডার বেশি আসছে। এটি আমাদের ব্যবসার ধরনকে প্রভাবিত করে এবং ইন্টারনেট একসেসের গুরুত্ব তুলে ধরে।
ই-কমার্সে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খলা, দায় সবার ঘাড়ে
কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের খারাপ সেবা দেওয়ার কারণে অনেক গ্রাহক নেতিবাচক অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন। কিন্তু সেই দায় (খারাপ অভিজ্ঞতা) সবার ঘাড়ে পড়ছে। অনেক ভালো প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কারণে এই সেক্টারটি আশার আলো দেখছে। চালডাল মনে করে, চালডাল, পাঠাও, ফুডপান্ডার মতো মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে টিকে থাকবে, আর খারাপ সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলো বাজার থেকে আপনা আপনিই ছিটকে যাবে।
এমএএইচ