মঙ্গলবার; ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫; ৭ আশ্বিন ১৪৩২

বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জীবন বদলে দিচ্ছে প্রযুক্তি ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জীবন বদলে দিচ্ছে প্রযুক্তি

-ইনফোটেক ইনসাইট ডেস্ক

Published : ১৮:০৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চীনের দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তি এখন শুধু বাণিজ্যিক সাফল্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তৈরি উন্নত সহায়ক ডিভাইসগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হলো চায়না কেয়ার অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন এক্সপো ২০২৫, যা চায়না ডিজেবল্ড পারসন্স ফেডারেশন আয়োজন করে। তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে কৃত্রিম অঙ্গ, বাধাহীন যানবাহন এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ চশমাসহ নানা ধরনের সহায়ক ডিভাইসের সমাহার ঘটে। এই পণ্যগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেসের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা ব্যবহারিক কার্যকারিতার পাশাপাশি ভবিষ্যৎমুখী নকশারও পরিচয় দেয়।

২০০৭ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা এই এক্সপোটি ছিল এর ১৮তম সংস্করণ। ফেডারেশন জানিয়েছে, এবারের আয়োজনে চীন এবং বিদেশ থেকে ৪৩০টিরও বেশি কোম্পানি ও সংস্থা অংশ নিয়েছিল।

৩০ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় বাম পা হারানো চিয়াং হংহাই (৫০) জানান, আট বছর আগে একটি জার্মান মেডটেক কোম্পানি, অটোবক-এর একটি স্মার্ট প্রস্থেসিস (কৃত্রিম পা) ব্যবহার শুরু করার পর তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে গেছে।

তিনি বলেন, আগের কৃত্রিম পা খুব একটা আরামদায়ক ছিল না এবং এটি পরে আমি বেশিক্ষণ হাঁটতে বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারতাম না। তখন আমি হতাশায় ভুগছিলাম এবং কোনও সামাজিক কাজে অংশ নিতে চাইতাম না।

তিনি আরও বলেন, এখন আমি যে প্রস্থেসিসটি ব্যবহার করি, তা আমাকে হাঁটতে, পাহাড়ে চড়তে এবং সাইক্লিং করতে সাহায্য করে। এটি এখন আমার শরীরেরই একটি অংশ।

অটোবকের চায়না অফিসের কর্পোরেট ও এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর ওয়াং লেই জানান, ১৯৯৩ সাল থেকে তারা চীনে কাজ করছেন এবং এক্সপোর সবকটি সংস্করণে অংশ নিয়েছেন।

তিনি বিশ্বাস করেন, সহায়ক ডিভাইস শুধু নড়াচড়া বা হাঁটাচলায় সাহায্য করে না, বরং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পারিবারিক ও কর্মজীবনে ফিরিয়ে এনে তাদের নিজস্ব মূল্য তৈরি করতেও সক্ষম।

শাংহাইভিত্তিক বইন হিয়ারিং টেকনোলজি কোম্পানি এই এক্সপোতে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ব্লুটুথ হেডফোন এবং একটি বোন কন্ডাকশন হিয়ারিং এইড প্রদর্শন করে। এটি স্নায়বিক শ্রবণশক্তি হ্রাসজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক এবং কার্যকর সমাধান প্রদান করে।

কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ও সিইও চিয়াং শিয়ানছুয়ান জানান, চীনে আনুমানিক ২২ কোটি মানুষ শ্রবণশক্তির সমস্যায় ভোগেন।

তিনি বলেন, শ্রবণশক্তি একটি মৌলিক অধিকার এবং আমরা হিয়ারিং এইডকে কেবল একটি ডিভাইস হিসেবে দেখি না, বরং এটি মানুষকে শব্দের জগতের সাথে সংযোগ স্থাপনের একটি সেতু।

ইন্টারন্যাশনাল ডিজেবিলিটি অ্যালায়েন্স-এর নির্বাহী পরিচালক হোসে মারিয়া ভিয়েরা এই এক্সপোতে তার অভিজ্ঞতাকে অবিশ্বাস্য বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি গতিশীল সহায়ক সরঞ্জাম, সহায়ক প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দেখে মুগ্ধ হয়েছি, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আরও স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। তিনি আরও বিশ্বাস করেন, চীন এই প্রযুক্তিগুলোকে প্রতিবন্ধী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে একটি বিশেষ অবস্থানে রয়েছে এবং চীনের অর্জিত অভিজ্ঞতা বিশ্বজুড়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 

সূত্র: সিএমজি

এমএএইচ

শেয়ার করুনঃ