মঙ্গলবার; ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫; ৭ আশ্বিন ১৪৩২

নতুন টেলিকম পলিসির কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা হুমকির মুখে ছবি: ইনফোটেকইনসাইট ডট কম

নতুন টেলিকম পলিসির কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা হুমকির মুখে

-ইনফোটেক ইনসাইট রিপোর্ট

Published : ১৮:৫০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশের টেলিকম বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজিস রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির নেতারা বলেছেন, সরকার টেলিকম পলিসিতে যেসব পরিবর্তন এনেছে সেজন্য সরকারকে আইএসপিএবির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে টেলিকম পলিসির ৫টা ক্লজ দ্রুত সংশোধন, পরিবর্তন করা উচিত বলে মনে করছি। ক্লজগুলো সংশোধন, পরিবর্তনের পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ রয়েছে বলে তারা মনে করেন।

রাজধানীর মহাখালির রাওয়া ক্লাবে রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত নতুন টেলিকম পলিসি: দেশি উদ্যোক্তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন- শিরোনামের এই মতবিনিময় সভায় আইএসপিবি'র সভাপতি আমিনুল হাকিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইএসপিবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, আমাদের আশা আজকের এ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা একটা মেসেজ সরকারের কাছে পৌঁছাতে পারবো। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে বসবেন। এসব সমস্যার সমাধান না হলে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।

আইএসপিএবির নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নতুন টেলিকম পলিসির অসঙ্গতি তুলে ধরে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তারা মনে করেন, কয়েকটি ক্লজ সংশোধ, পরিবর্তন করলে দেশীয় উদ্যোক্তারা হুমকির মুখে পড়বেন না। তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে।

ব্যাখ্যাগুলো হলো-  

নতুন টেলিকম পলিসির ৭.৪.৫ ধারায় বলা আছে- নেশনওয়াইড আইএসপি ও ডিভিশনাল আইএসপি এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার) হতে পারবে এবং জেলা ও উপজেলা/ থানা আইএসপি জেলা আইএসপি হতে পারবে।

অপরপক্ষে টেলিকম খাতের নীতি-নির্ধারক বা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, টেলিকম খাতে মুদি দোকানদার, অনভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা ঢুকে গেছে।

এটা পর্যালোচনা করে আইএসপিএবি বলছে, থানা এবং উপজেলা পর্যায়ের আইএসপিরা ২০০৯ সালে লাইসেন্স পেয়েছে এবং তার আগে থেকে ব্যবসা করে আসছে। ফলে ২০ বছর ধরে যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবসা করে আসছে তাদের একটি ইন্ডাস্ট্রি অভিজ্ঞতা আছে। লাস্ট মাইল ইউজারকে কিভাবে কোয়ালিটি অব সার্ভিস প্রদান করতে হয় সেই ব্যাপারে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তাদের একটা রোল আউট হয়ে গেছে। ব্যবসার সম্প্রসারণ হয়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের মেইনস্ট্রিমে আনার জন্য এটা উন্মুক্ত থাকা উচিত। অপরপক্ষে দেখা যায়, অনেক বিভাগীয় আইএসপি ছোট একটা মাত্র জেলায় ব্যবসা করে। তাদেরকে ফোর্সফুলি নেশনওয়াইড আইএসপি না দিয়ে দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে না বলার থেকে এটা উন্মুক্ত থাকা উচিত, যার ইচ্ছা সে এফটিএসপিতে চলে যেতে পারবে, যার ইচ্ছা সে জেলা এফটিএসপিতে চলে যেতে পারবে।

৭.৪.৭- এই ধারায় বলা আছে- যারা শুধুমাত্র জেলা এফটিএসপিতে যাচ্ছে তাদেরকে বলা হয়েছে তারা শুধু ইন্টারনেট ও ডেটা সার্ভিস দিতে পারবে।

আইএসপিএবি বলছে, ২০২৫ সালে এসে আমরা ইন্টারনেটের ব্যবহার দেখলে দেখতে পাবো ইন্টারনেটে অনেক ধরনের ডিজিটাল সার্ভিস (আইপি টেলিফোনি, আইপি-টিএসপি, টেলিমেডিসিন ইত্যাদি) উদ্ভাবন যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সার্ভিস লাস্ট-মাইল গ্রাহকরা যেন পান সেজন্য বর্তমান সরকারও উৎসাহ দিয়ে আসছেন। ডিজিটাল সার্ভিস যেন জেলা আইএসপিরাও দিতে পারে এবং কোনও বৈষম্য যেন না থাকে। 

৭.৪.৭- এই ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেরকারি খাতের ৩টি এনটিটিএন অপারেটরদের পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই নামে-বেনামে এএনএসপি লাইসেন্স আছে। এটা থেকে ভুল বোঝাবুঝি হবে। অথরাইজড গ্রাহক কানেক্ট করতে পারবে এনটিটিএন অপারেটররা- বিগত সরকার এরকম একটা প্রজ্ঞাপন দিয়েছিলো। ওই প্রজ্ঞাপন অপব্যবহার করে এএনএসপি অপারেটরদের ডোমেইনে ঢুকে অনেক ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ধারাটা আসলে কোনোভাবেই থাকা উচিত নয়। 

৭.৭.৬ এবং ৭.৭.১১ ধারায় বলা হয়েছে- এনটিটিএন অপারেটররা ট্রান্সমিশন অপারেটর থাকবে, এএনএসপি অপারেটর হিসেবে এটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি, সাপোর্ট করছি। তবে এ বিষয়ে নীতি-নিরর্ধারকদের কাছে আমাদের একটি প্রশ্ন, ২০২৫ সালেও যেখানে এনটিটিএন অপারেটররা নেওয়ার্ক তৈরি করতে পারেনি ওই এলাকাগুলো কি ইন্টারনেট সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে? ডিজিটাল বৈষম্য কি এখনও অবস্থান করবে? এই বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য যেখানে এনিটিটিএন অপারেটররা ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করেনি সেখানে এএনএসপি অপারেটররা যেন সেখানে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে।

এমএএইচ

শেয়ার করুনঃ