.png)

আইসিএক্স না থাকলে সরকার বছরে রাজস্ব হারাবে ৩০০ কোটি টাকা
Published : ১৮:৩২, ৩১ মে ২০২৫
নতুন টেলকো টপোলজিতে আইসিএক্স (ইন্টারকানেকশান এক্সচেঞ্জ) বাতিল হলে সরকার বছরে ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। এর বিপরীতে সরকারের আয় হবে মাত্র ১৬ কোটি টাকা। চাকরি হারাবে ৭০০ প্রকৌশলী। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) টেলিকম নীতি পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে আইসিএক্স ফোরাম ও টেলিকম রিপোর্টারদের সংলাপে এমনটাই দাবি করেছে ব্যবসায়ীরা। খসড়া টেলিযোগাযোগ সংস্কার নীতিমালা-২০২৫: ইন্টারকানেকশান এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) এর প্রাসঙ্গিকতা শীর্ষক কর্মশালায় ও ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
দেশের টেলিকম বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্কস বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এই কর্মশালা আয়োজন করে। টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দে’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
অ্যাসোসিয়েশন অব আইসিএক্স অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এআইওবি) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান (অব.) বলেন, আইসিএক্স টেলিকম খাতের তৃতীয় চোখ। এই খাতের ওয়াচ ডগ। আমাদের আছে বিশ্বমানের প্রকৌশলী। এরাই টেলিকম খাতের উন্নয়ন করেছে। কিন্তু আজ এই খাত বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এআইওবির কোষাধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অব.) জানান, স্থানীয় ব্যবসা ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেওয়া, মানিলন্ডারিং বন্ধ এবং জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় নীতিমালা করা হয়েছিলো। এখন নতুন টপোলজি পুরো খাতকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সরকার লেয়ার কমানোর কথা বলে মোবাইল অপারেটরদের লাইসেন্স ছাড়াই গেটওয়ে লেভেলে সবক্ষেত্রেই সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
অগ্নি সিস্টেমসের হেড অব অপারেশন আহমেদুর রহমান রুমেল জানান, জুলাইয়ের পর প্রতিদিন দেশে শত কোটি এসএমএস আইসিএক্স -এর মাধ্যমে বিনিময় হয়। এতে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। কোনও টাকাই পাচ্ছে না সরকার। আইসিএক্স -এর মাধ্যমে এসএমএস বিনিময় হলে সরকারের আয় হবে ৮৪ কোটি টাকা।
ভয়েসটেলের চিফ অপারেটিং অফিসার মুস্তাফা মাহমুদ হোসেন, বাংলা আইসিএক্স পরিচালক হাসিবুর রহমান, বাংলাটেলিকমের সিইও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. আব্দুল হান্না, ইমাম নেটওয়ার্ক লিমিটেডের সিইও এম নুরুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা জানান, দেশে ৫০টিরও বেশি ভয়েস সেবাদাতা একসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস (মোবাইল, পিএসপিএন ও আইপি-টিএসপি) অপারেটর কাজ করছে। এগুলোর প্রত্যেকে পৃথকভাবে দ্বিপক্ষীয় সংযোগ স্থাপন করতে গেলে আইসিএক্স ব্যবস্থার চেয়ে খরচ বেশি হবে। আইসিএক্স বাতিলে অবৈধ ভিওআইপি বাড়বে, বাড়বে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণও।
কর্মশালায় আইসিএক্স -এর কার্যক্রম তুলে ধরে জানানো হয়, আইসিএক্সের মূল কাজ হলো ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েগুলোর (আইজিডব্লিউ) মাধ্যমে বিদেশ থেকে যেসব কল আসে, তা মোবাইল ও অন্যান্য টেলিফোন (এএনএস বা একসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস) অপারেটরের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আইসিএক্সের মাধ্যমে কল সরকারের নজরদারিতে থাকে। এর ফলে গ্রে ট্রাফিক বা অবৈধ কলের মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ সম্ভব হয়। তারচেয়েও বড় বিষয় হলো—আইসিএক্সের ডিজিটাল নজরদারির মাধ্যমে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা হয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্প্রতি ‘টেলিকম খাতে নেটওয়ার্ক ও ব্যবসা পরিচালনার লাইসেন্স পুনর্বিন্যাসের’ জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তাতে আইসিএক্স বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
প্রসঙ্গত, মোবাইল কলের ২ টাকা ৪০ পয়সার মধ্যে আইসিএক্স পায় ৪ পয়সা। দুই পয়সা বিটিআরসিকে দিয়ে দিতে হয়। এই দুই পয়সার মধ্যে ১ পয়সা লাইসেন্স, ট্যাক্স, ভ্যাট বাবদ চলে যায়। আইসিএক্স কোম্পানিগুলোর কাছে থাকে কেবল ১ পয়সা। নতুন আয়োজনে এই ১ পয়সাও কেটে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে আয়োজকরা অভিযোগ করেন।
এমএএইচ