.png)

অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনে ভ্যাট বৃদ্ধিতে উৎকণ্ঠায় উদ্যোক্তারা
Published : ১৮:১৬, ১৭ জুন ২০২৫
ই-কমার্স ও অনলাইন ব্যবসায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেটকে আরও সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করার প্রত্যাশা নিয়ে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু তাদের এই আশা পূরণ না হওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে। উল্টো, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন, কারণ ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে বিনিয়োগ এখনো সীমিত, বাজার দুর্বল এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নও অপ্রতুল। ভ্যাট বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার কতটা রাজস্ব আদায় করতে পারবে, তা স্পষ্ট নয়। তাদের মতে, বাজেটে বিভিন্ন খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ই-কমার্স খাতের অবদান খুবই কম। লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগের অর্থ থেকেই বাড়তি ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে, যা তাদের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
এতদিন ই-কমার্স ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রেতারা ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করতেন। উদাহরণস্বরূপ, ১০০ টাকা মুনাফার ক্ষেত্রে ভ্যাট ছিল ৫ টাকা। কিন্তু নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন তাদের ১৫ টাকা ভ্যাট দিতে হবে। এই বাড়তি ভ্যাটের বোঝা সামলাতে বিক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন, যার প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। যেসব প্ল্যাটফর্ম নিজেরা পণ্য সংগ্রহ করে বিক্রি করে, তারা নিজেরাই ভ্যাট পরিশোধ করবে। ফলে ভ্যাট বৃদ্ধি উদ্যোক্তা ও ভোক্তা উভয়ের জন্যই চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, যা ই-কমার্স খাতের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ই-কমার্স এমন একটি খাত, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্প্রসারিত হয় না। যেসব দেশ এই খাতে সফল, তারা মাথাপিছু ৭০ থেকে ২০০ ডলার বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই বিনিয়োগ মাত্র ৩ ডলারেরও কম।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ই-কমার্স খাতের বাজারের আকার বর্তমানে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই খাতে প্রায় ৫ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিক্রেতা রয়েছেন। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ ই-কমার্স ব্যবসায়ীর পক্ষে দোকান ভাড়া করে ব্যবসা করা সম্ভব নয়, তাই তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করেন। বাড়তি ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
ইন্টারনেট ব্যবহার ও ই-কমার্সের বাস্তবতা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের জরিপ অনুযায়ী, স্মার্টফোন ব্যবহারের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যবহার তেমন বাড়েনি। গত ডিসেম্বরে মাত্র ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবহার করত, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ, দেশের প্রায় অর্ধেক পরিবার এখনও ইন্টারনেট সেবার আওতার বাইরে। এই পরিস্থিতিতে ই-কমার্সের সম্প্রসারণ আরও চ্যালেঞ্জিং।
এমএএইচ